
দিনাজপুর জেলার বিরামপুর পৌরশহরের পূর্বপাড়া মহল্লার মুন্না শেখের ছোট ছেলে মোস্তাকিম। বাবা পেশায় অটোরিকশা চালক। উপজেলা কলেজিয়েট উচ্চ বিদ্যালয়ে মানবিক বিভাগে দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী মোস্তাকিম। বড়ভাই জাহিদুল ইসলাম আর বাবা-মা নিয়ে চার সদস্যের পরিবার। পড়ালেখার পাশাপাশি ব্যাডমিন্টন খেলাকে আপন করে নেয় মোস্তাকিম। এরমধ্যে জাতীয় ব্যাডমিন্টন আসরের তারিখও ঘোষণা হয়। কিন্তু সে সময় বাড়িতে বাবা-মা দুজনেই গুরুতর অসুস্থ হন। বাবার অটোরিকশার চাকা থেমে গেলে বন্ধ হয় আয়ের পথ। অর্থাভাবে ঢাকায় থাকা-খাওয়ার খরচ জোগানো ও অনুশীলন অনিশ্চিত হয়ে পড়ে তার।
সংসার সামাল দিতে অসুস্থ বাবা যখন অনেকটাই বেসামাল ঠিক তখন অসহায় হয়ে পড়ে মোস্তাকিমের পরিবার। বড়ভাই জাহিদুল ইসলাম শহরের একটি হার্ডওয়ারের দোকানে কাজ করে যা আয় করেন তা অনেকটা নুন আনতে পান্তা ফুরায় অবস্থা। সংসারের এ চরম দুরবস্থায় অনেকটা চ্যালেঞ্জ নিয়েই সংসারের দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেয় মোস্তাকিম। স্কুলের পাঠ্যবই আর ব্যাডমিন্টন ছেড়ে চেপে ধরে অটোরিকশার হাতল। অসুস্থ বাবা-মাকে দেখবে নাকি গ্রাম ছেড়ে খেলার মাঠে যাবে, এমন দোলাচলে কেটে যায় প্রায় দুমাস। এর ফলে জাতীয় পর্যায়ে আর খেলা হয় না মোস্তাকিমের।
চলতি বছরের শুরুতে উপজেলায় আন্তঃস্কুল প্রতিযোগিতায় জেলা পর্যায়ে চ্যাম্পিয়ন হয়ে আলোচনায় আসে অদম্য মোস্তাকিম। পরে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সহযোগিতায় জাতীয় ব্যাডমিন্টন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের প্রস্তুতি নিতে ঢাকায় ‘সারোয়ার ব্যাডমিন্টন একাডেমি’তে অনুশীলন শুরু করে। গত ২৬ সেপ্টেম্বর ভারতের আসামের গুয়াহাটির তরুণ রাম ফুকান ইনডোর স্টেডিয়ামে শুরু হওয়া দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক জুনিয়র (অনূর্ধ্ব-১৫) ব্যাডমিন্টন চ্যাম্পিয়নশিপ ২০২২ এর দ্বৈত ইভেন্টে ‘বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৫ জাতীয় দল’এর শাটলার হয়ে অংশগ্রহণ করেন মোস্তাকিম ও সিফাত জুটি।
এ আসরে বাংলাদেশ, ভারত, শ্রীলংকা, নেপাল, ভুটান ও মালদ্বীপ অংশগ্রহণ করে। নেপালের শাটলার শাহিল ও কবির কেসিকে পরাজিত করে ফাইনাল নিশ্চিত করেছিল মোস্তাকিম ও সিফাত। গত ৩০ সেপ্টেম্বর স্বাগতিক ভারতের শাটলার অভিনব-কুন্দিরিয়া প্রতীক জুটিকে ২-১ সেটে পরাজিত করে চ্যাম্পিয়ন ট্রফি ছিনিয়ে আনে মোস্তাকিম ও সিফাত জুটি।
শাহ আলম, রুবেল হোসেন, আসমা বেগমসহ বেশ কয়েকজন এলাকাবাসী বলেন, ব্যাডমিন্টন খেলায় মোস্তাকিম চ্যাম্পিয়ন হয়ে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক আসরে স্বর্ণপদক জিতেছে এটি বাংলাদেশের অনেক বড় অর্জন। আমরা তাকে বিশ্বের অনেক বড় আসরে দেখতে চাই। এলাকাবাসী হিসেবে আমরা অনেক খুশি।
বিরামপুর পৌরসভার মেয়র আক্কাস আলী বলেন, মোস্তাকিমের বাবা একজন ভ্যানচালক। তারমধ্যে যে ক্রীড়া নৈপুণ্য লুকিয়ে আছে তা আমি ভাবতেই পারিনি। চ্যাম্পিয়ন হওয়ার খবর শুনে আমি খুশি হয়েছি। মোস্তাকিমের মত ছেলেরা সামান্য সুযোগ পেলেই নিজের দেশের লাল-সবুজ পতাকা বিদেশের মাটিতে সাফল্যের সঙ্গে উড়াতে পারে।
বিরামপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার পরিমল কুমার সরকার বলেন, ভারতের মত শক্তিশালী দলকে হারিয়ে মোস্তাকিম চ্যাম্পিয়ন হয়ে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক আসরে স্বর্ণপদক জিতেছে, এটি বাংলাদেশের অনেক বড় অর্জন। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছে এবং তার পরিবারকে একটি বাড়িসহ সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে।
Leave a Reply